নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় আব্দুল কাদের মিলন (৩৫) নামে এক যুবলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
শনিবার (১২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার নেওয়ার পথে যাত্রাবাড়ী এলাকায় তার মৃত্যু হয়।
এর আগে শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরপার্বতী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের হাফেজ আব্দুর রহিম এতিমখানার সামনে তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।
তবে পুলিশ তাৎক্ষণিক এ হত্যাকাণ্ডের কোনো কারণ জানাতে পারেনি।
নিহতের পরিবারের বলছে, রাজনৈতিক রেশ ধরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
নিহত মিলন একই উপজেলার চরহাজারী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
তিনি একই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আমিনমাঝি বাড়ির মো. ইসমাইলের ছেলে।
নিহতের ছোট ভাই আব্দুর রহিম রাকিব বলেন, গত ৫ আগস্টের পর বাড়ি থেকে চলে যান বড় ভাই মিলন।
এরপর তিনি সৌদি আরব গিয়ে ওমরাহ পালন করেন। ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিন তিনি দেশে ফেরেন। শুক্রবার রাতে আমার সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে পার্শ্ববর্তী ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলায় তার অসুস্থ শালাকে দেখতে যান ভাই মিলন। রাত ৯টার দিকে সেখান থেকে ফেরার পথে কোম্পানীগঞ্জের চৌধুরীহাট বাজারের চুয়ানির টেক এলাকায় পৌঁছালে দুই-তিনটি মোটরসাইকেলে দুর্বৃত্তরা আমাদের ফলো করতে থাকে। বিষয়টি আমার ভাই বুঝতে পেরে তিনি তার মামা শ্বশুর যুবদল নেতা মাইন উদ্দিনকে মোবাইলফোনে কল করে বিষয়টি জানান। এর মধ্যে ওই দুর্বৃত্তরা আমাদের অটোরিকশার সামনে এসে গতি রোধ করে থামিয়ে ফেলে।
রাকিব আরও বলেন, হামলাকারীরা অটোরিকশা থেকে আমার ভাইকে টেনে-হেঁচড়ে নামিয়ে নিয়ে উপজেলার চরপার্বতী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের হাফেজ আব্দুর রহিম এতিমখানার সামনে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে লোহার পাইপ দিয়ে চার ঘণ্টা ধরে ধাপে ধাপে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। যুবদল নেতা মাইন উদ্দিন আমাদের বাঁচাতে এলে হামলাকারীদের তোপের মুখে পড়ে তিনি চলে যান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে প্রথমে আমার ভাই মিলনকে হামলাকারীদের থেকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। পরে সেনাবাহিনী এসে তাকে উদ্ধার করে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
নিহতের স্ত্রী বিবি জুলেখা বলেন, ‘আমার স্বামী মৃত্যুর আগে তার হামলার সঙ্গে জড়িত ২০-২৫ জনের নাম বলে গেছেন। তারা বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিন্তু আমার এখন কারও নাম ও কোনো কিছুই মনে আসছে না। পরে মনে পড়লে জানাব।
অভিযোগের বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমান রিপন বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে বিএনপির কোনো লোক জড়িত না। গত ১৫ বছর এলাকায় মাদক ও সন্ত্রাসের রাজত্ব চালিয়ে আসছিলেন মিলন। তার হাতে নিষ্পেষিত লোকজনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের শিকার হয়েছেন তিনি, এমনটাই মনে হচ্ছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, জামায়াত-বিএনপির লোকজন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনবে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে মিলনের মৃত্যু হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।